গর্ব

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

মিজানুর রহমান মিজান
  • ১৪
  • ১৮
এ সংখ্যার লেখার বিষয় নির্ধারিত হয়েছে "গর্ব"। তাই এ ব্যাপারে লিখতে গিয়ে প্রথমেই মনে পড়ে স্মৃতির পশরা হাতড়িয়ে আল_হাদিছে এসেছে,"যার হৃদয়ে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে, সে কখনো বেহেস্ত প্রবেশ করতে পারবে না "। অথচ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ আশরাফুল মখলুকাত উপাধি প্রাপ্ত মানুষ স্বয়ং স্রষ্টা কর্তৃক এবং সুরা নিসা _২_১৩ আয়াতে বলা হয়েছে ,"যে আল্লাহ এবং রসুলের অনুগত হয়ে চলবে ,আল্লাহ তাকে স্বর্গে স্থান দান করবেন। যার নীচে নদী প্রবাহিত। সেখানে জারী চিরকাল থাকবে এবং এ মহা সাফল্য।"অন্যত্র তথা সুরা ত্বা-হা-১_১৫ আয়াতে বলা হয়েছে,"কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী। আমি এর সংগঠিত হওয়ার মুহূর্ত গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্ম ফল লাভ করে "। আবার ঐ সুরার ৩_১৫ আয়াতে বলা হয়েছে ,"জীব মাত্রই মরণশীল। আমি তোমাদের মন্দ-ভালো দ্বারা বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই নিকট তোমরা ফিরে আসবে।"তাছাড়া সুরা সোয়াদ ৫_৮৭ আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে ,"এ (কোরআন) বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ মাত্র"। স্মর্তব্য সুরা মুমিনের ৬_৬০ আয়াতে আছে ,"যারা অহংকারে আমার ইবাদতে বিমুখ , তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।"
"আল্লাহর আদেশ সমূহের প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি প্রদর্শন এবং যাবতীয় সৃষ্ঠ জীবের প্রতি সহানুভূতি _ইহাই ইসলাম "। মানবতাই মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম গুণ।প্রখ্যাত ব্যক্তি আব্দুর রহমান শাদাব বলেছেন ,"গর্ব কালো ,গৌরব আলো।গর্বের নিন্দা করলে ও গৌরবহীন কাউকে মনে ধরে না"।আমরা সবাই জানি ,"অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী।কিন্তু কেন ভয়ংকরী তা জানি না।মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান বাড়িয়ে চলার সাধনায় চিরদিন সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে থেকেছে আমিত্বের অহংকার।আমি যেটুকু জানি সেটা জানাই যথেষ্ট_এই অহংকার"মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ বাক্যটির নিগুঢ় রহস্যের অন্তনিহিত মর্মমূল ওতো তাই বলে দেয়।প্রবাদ রয়েছে প্রচলিত ,"অহংকার পতনের মুল"।
অর্থ থেকে কোন সদগুন জন্মে না,বরং অর্থ এবং অন্যান্য কাম্য বিষয় সদগুন থেকে জন্ম লাভ করে।তাইত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগর বলেছেন,
"গুনময় হইলেই মানে সব ঠাই
গুণহীনে সমাদর কোনখানে নাই"।
চাণক্য পণ্ডিতের কথায়,
একটি সুবৃক্ষ যদি হয় কুসুমিত
গন্ধে তার সারা বন হয় আমোদিত,
তেমনি সুপুত্র যদি জন্মে একজন
কুল ধন্য হয় জেনো তাহার কারণ "।

সুতরাং ভব ভুতির কথা হচেছ,"ফলবান বৃক্ষ আর গুণবান লোক আপনা থেকেই নত হয়।শুকনো কাঠ আর মূর্খ দুমড়ে যায় কিন্তু নত হয় না"।কিন্তু টমাস গ্রে বলছেন,"গৌরব পথ দেখায়, কিন্তু তা কবরের"।আরবি একটি বহু প্রাচীন প্রবাদ রয়েছে,"আজ যা আগুন , আগামীকাল তা ছাই"। তবে কেন কর,করি মিছে বড়াই।গন্তব্যের যাত্রী মোরা ক্ষণিক সময়ের ব্যবধানে যাত্রার পরিসমাপ্তি।পালকী চড়ে যাচিছ শশুর বাড়ি। বেয়ারাদের তাড়াতাড়ি।তাইতো লাগছে হুড়াহুড়ি। ক'দিনের যাত্রা বা আগমন। অতিরিক্ত থাকলেই অপমান আর অপবাদে জর্জরিত। বাঁশীর ফুঁৎকারে নিমিষেই খেলার সমাপ্তি।উদ্যত শক্তি,প্রভাবশালী ও কুপোকাত। "কল্পিত গৌরব এক পলকেই হারিয়ে যায়" বলে মন্তব্য করেছেন টমাস ফুলার নামক ব্যক্তিত্ব।আবার এমিলি ডিকনসনের ভাষায় বলতে হয়,"গৌরব হলো নাটকীয় ব্যাপার ; দর্শকদের সচেতন সমর্থন না পেলে গৌরব সার্থকতা পায় না""।
সাধনাতেই সকল কিছু নির্ভরশীল।কিন্তু যেন তেন সাধনায় সুফল আসে না ।এৰেত্রে রয়েছে সু-কু এর প্রভাব।সু ্এর মধ্যেই নিহিত সকল প্রকার ভালোর উপাদান। "ভাগ্য হচেছ একটা বাজারের মতো।সেখানে অনেক্ষণ থাকতে হয়,কম সময় থাকলে দাম পড়ে যায়।"ফ্রান্সিস বেকনের উক্তিতে সুস্পষ্ঠতা রয়েছে।সময়কে ব্যয় করি "করব" বলে।কিন্তু সময় গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না,আসে না।তাই যথা সময়ে যথোপযোগী কার্যক্রম পরিচালনা উত্তম।ভাগ্য সুযোগ নয়। এটা শ্রম।নিয়তির দুর্মূল্য হাসি ।যা অর্জন করতে হয়।অত্যল্প সীমিত সময় ও সুযোগকে অবহেলায় অতিক্রমে কোন সার্থকতা নেই।সময় অতি মূল্যমান।উহার গুরুত্ব অপরিসীম।ক্ষণিকের যাত্রীর আবার কিসের গর্ব।সকল ক্ষমতার উৎস মহান স্রষ্ঠার।তার কাছে নিজকে সপে দেওয়াতে আনন্দ ও প্রশান্তি প্রচুর।গর্ব করে সাদ্দাদ বানায় বেহেস্তখানা ,এক নজর দেখতে ভাগ্যে তার হল না।অনুকূল চন্দ্র বলেছেন,
"নিজের গুণগান করে সদা
গায় কেবল নিজের খ্যাতি,
নষ্ট কিন্তু সে জন জানো
কুৎসিত তাহার আত্মরতি।"
অন্যত্র আবার বলা হয়েছে ,
"যার যতই না হউক মন্দ
আমার ভাল চাই-ই চাই,
এমন তরো হীনমনাদের
ক্ষতি ছাড়া গতি নাই"।
অথবা
খাতির করে না যে জন কারো
গবার কাছে চায়ই খাতির,
বুঝো তাদের হৃদয় আধান
প্রায়ই ভরা মন্দ মতির"।
"অহংকারী হতে অবিবেচনাই যথেষ্ট ,বুদ্ধি না থাকলে ও চলে।যিনি জানেন শেষ পর্যন্ত কিছুই ঠিকবে না,গর্বোদ্ধত হতে তার বাধে"প্রখ্যাত মনিষী আব্দুর রহমান শাদাব অত্যন্ত সুকল্পিত বিবেক প্রসূত বাক্যের মাধ্যমে সচেতনতার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।জীবন তরী চালাও সে পথে , যে পথে মুক্তি নিহিত পরকালের।হতে বাধা প্রদান করেছেন আরেক প্রখ্যাত ব্যক্তি জর্জ ইলিয়ট,"ঐ ব্যক্তি মোরগের মতো, যে মনে করে যে সূর্য তার ডাক শুনার জন্য উদিত হয়েছে"।"আত্মগর্ব সমস্ত রকম উন্নাসিকতার ফসল যা আবার চায় সামাজিক বৈধতা"উইলিয়াম হ্যাজলিটের বক্তব্যে এ সত্যেরই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
মানব জনম সার্থক, সুন্দর ও সফলকামী করতে প্রত্যাশা থাকা সকলের মনে প্রাণে সত্য, সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়।তবেই না মুক্তি,উন্নতি ও সমৃদ্ধির আশাবাদ হয় প্রবলতর।গর্বের সহিত লোভের বিয়োজন অত্যন্ত জরুরী। নতুবা চানক্যের ভাষায়,
" লোভ হতে কাম,ক্রোধ,মোহ,মৃত্যু হয়
পাপের কারণে লোভ,নাই যে সংশয়"।
প্রত্যেক মানুষ হোক আলোয় উদ্ভাসিত,পরিত্রাণ পাবার মন্ত্রে উজ্জীবিত এ আশাবাদ আমার থাকছে হৃদয়ের প্রান্ত বিন্দু হতে। মনোনিবেশ হোক হিংসা, নিন্দা পরিত্যাজ্যে মানব সেবায় নিয়োজিত।হবে তুমি বরণীয়,স্মরণীয় এ জগতে।কারণ আমরা জানি "যেখানে মিষ্টি পানির কুয়া থাকে, মানুষজন,পক্ষীকুল এবং পিপীলিকা (প্রভৃতি)সেখানেই ভিড় করে"।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান লেখাটি যদিও গল্প হয়নি কিন্তু অনেক মূল্যবান একটা প্রবন্ধ হয়েছে| লেখকের প্রতি অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো|
sakil গল্পের মত হয়ে উঠেনি যদিও তবে অনেক শিক্ষনীয় বসয় তুলে ধরেছেন . অনেক ধন্যবাদ . আপনার এই লেখার মাঝে শেষ হলো গর্ব সংখ্যার সবগুলো লেখা পরা .
আশা আপনার গল্প-কাম-প্রবন্ধ ভালো লেগেছে। বিশেষ করে মনিষীদের বক্তব্যগুলো।
চৌধুরী ফাহাদ অনেক শিক্ষণীয় উপাত্ত জড় করেছেন। ভাল লাগলো।
খন্দকার নাহিদ হোসেন জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। অহঙ্কারের কুফল। ভালো লাগলো।
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি প্রবন্ধটি ভালো লাগলো |
মিজানুর রহমান রানা আপনার লেখা বেশ সুন্দর। তবে আপনারা একটু ভুল করে ফেলেন। গর্ব বিষয়টিকে অনুধাবন না করে বরং তাকে অহঙ্কারে ফেলে দেন। সাহিত্য চর্চা করতে এসে এই সামান্য বিষয়টিকে বুঝতে যদি অক্ষম হন তাহলে কীভাবে তা করবেন। গর্ব হচ্ছে আপনি বা আপনার কোনো বিষয়ে ভালো কাজের ফল। আর অহঙ্কার হচ্ছে মনের কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ। অহঙ্কার পতনের মূল। কিন্তু কোনো ভালো অর্জনই হচ্ছে গর্ব। আপনি আপনার দেশের ভালো কোনো কিছুর জন্যে গর্বিত নন? সেটা কি অহঙ্কার? বিষয়টিকে অনুধাবনের চেষ্টা করবেন সব সময়। অযথা সাবজেক্ট না বুঝে একটা লিখে দিলেই হলো না। বরং এতে অন্যদের সমস্যা হয়। ভালো থাকবেন, শুভ কামনা।
মামুন ম. আজিজ ঠিক গল্পের আদোল পেলো না। সুন্দর একটা প্রবন্ধ বলা যেতে পারে।
সূর্য গর্ব আর অহংকার এক বিষয় নয়। লেখাটা প্রবন্ধ ধরণের হয়েছে। ঠিক গল্প বলা যাবে না।

২৮ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪